সাজ্জাতুল জুম্মা, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহ জেলায় প্রতিবছরই আমের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। এবারও কৃষকেরা আম চাষ করে এনজিওর ঋণ শোধ করে সংসার চালানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন মাটি হয়ে গেছে করোনা ও লকডাউনে। এ লকডাউনে বাইরে থেকে ঝিনাইদহে আমের ব্যাপড়ি প্রবেশ করতে না পারায় শত শত বাগান মালিক পথে বসতে শুরু করেছে। আম বিক্রী করতে না পারার কারনে আম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাইরের জেলার আম ব্যাপড়িদের আসতে না দেওয়া ও বিক্রী করতে না পারার প্রতিবাদে সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের আম বাগান মালিক ও বিক্রেতারা আম রাস্তায় ফেলে মানববন্ধন করেছে। অবিলম্বে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আম ব্যাপাড়ি ও আড়ৎ মালিকদের বাধা ছাড়াই প্রবেশ করার অনুমতি চেয়েছে সরকারের কাছে। তা না হলে চাষীরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হবে বলে তারা আশংকা করছেন।
আম চাষীরা অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলাতে আমের আবাদ হয়ে থাকে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় আমের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আম রুপালী, হিমসাগরসহ বিভিন্ন প্রজাতীর আম কোটচাদপুর আমের মোকাম থেকে সারা দেশে ব্যাপাড়ি ও আড়ৎ মালিকেরা এসে আম ক্রয় করে নিয়ে যান। এবার করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের কারনে আম ব্যাপড়িও আড়ৎ মালিকদের আসতে না দেওয়ার কারনে আম বাগানের মালিক ও চাষীদের মাথায় হাত উঠেছে। শত শত বাগানে আম ধরে থাকলেও ব্যাপাড়িরা ট্রাক-পিকআপ নিয়ে না আসার কারনে মাঠের পর মাঠ ও শত শত বিঘার জমিতে সে আম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার স্থাণীয় বাজারে বিক্রী হলেও কেজি প্রতি ১৫-থেকে ২০ টাকা বিক্রী হচ্ছে। যেখানে বাগান মালিকদের বিঘা প্রতি ১ হাজার টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে বাইরের জেলাতে বাগান মালিকেরা আম কিনতে না আসলে শত শত বাগান মালিক ও ব্যবসায়ি ও এর সাথে জড়িত শ্রমিকেরা ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পথে বসা ছাড়া কোন উপায় নেই তাদের। অনেকেই ব্যাংকের লোন ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমের বাগান করেছে তারাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এমনই একজন আম বাগানের মালিক সদর উপজেলার কাশিমপুর কাশিমপুর গ্রামের বুলবুল আহমেদ বাপ্পি এনজিও থেকে ৭লাখ টাকা লোন নিয়ে ৬বিঘা জমিতে আম বাগান করেছে। স্বপ্ন দেখেছিলো সে ঢাকাসহ বাইরের আড়ৎ মালিক ও ব্যাপড়িদের কাছে প্রায় ৪শত মন আম প্রায় ৮লাখ টাকার মত আম বিক্রী করে ঋণ শোধ করে সংসার চালানোর। সে স্বপ্ন লকডাউনে তার পথে বসিয়ে দিয়েছে আম বিক্রী করতে না পারার কারনে পথে বসার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বাপ্পির মত এমন শত শত বাগান মালিক ও এর সাথে জড়িত শ্রমকিদের একই করুন দশায় রুপ নিয়েছে।
এদিকে ব্যাপড়িদের কাছে আম বিক্রী করতে না পারার কারনে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে গত রোববার সদর উপজেলার কাশিমপুর আম বাগানের সামনের সড়কে দাড়িয়ে বাগান মালিকেরা মানববন্ধন করেন। রাস্তায় আম ফেলে দিয়ে মানববন্ধনে তারা অবিলম্বে লকউাউনে ব্যাপড়িদের ট্রাক নিয়ে পন্য সরবরাহ করার দাবি জানান। বাধার মুখে ব্যাপড়ি ও আড়ৎ মালিকেরা আসতে না দেওয়ায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতিসাধন হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় আম বাগানের মালিক ও চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে বাগান মালিক রবিউল, ও ব্যবসায়ি জিহাদুল জানান, অবিলম্বে ব্যাপাড়িদের বিনা বাধায় আসতে দেওয়া হলে আমরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমাদের আম বিক্রী না হওয়ার কারনে আম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন সহযোগিতা না করলে ব্যাপারীরা আস্তে পারবে নাসে কারনে আমাদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বো।
আর সাধারন ক্ষুদ্র ক্রেতা রাকিব হাসান জানান, এবার লকডাউনের কারনে আম চাষীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। সে কারনে গত বছরের তুলনায় আমের দাম কম পাওয়ায় আম কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজগর আলী জানান, জেলায় ২ হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩৩হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। করোনার ভয়াল বিন্তার ও নানা বিধি নিষেদের কারণে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারছে না। বাইরের ব্যাপারীরা পরিবহন সংকটের কারণে আসতে পারছে না। তাদের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছে যেনো বাইরের ব্যাপারী প্রবেশ করতে পারেন। তাহলেই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমরা এবার তাদের পন্যবাহী পরিবহন ও আম ব্যাপারীদের ঝিনাইদহে এসে আম কিনে নিয়ে যেতে কোন সমস্যা হবে না বলে স্ট্রীকার লাগিয়ে দেওয়া হবে। আমরাসহ প্রশাসন এ কাজে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আরও জানান।